পরিচিতি
ধানের মিলিবাগ পোকা হচ্ছে একধরনের নরম,ডিম্বাকৃতি এবং মোমের মত আবরণবিশিষ্ট পোকা যা প্রাকৃতিক,বাগানের কিংবা ঘরোয়া পরিবেশের অসংখ্য উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এদের সাধারণত কলোনি আকারে দেখতে পাওয়া যায়। এরা একপ্রকার ছিদ্রকারি-চোষক ধরনের কীট যাদের দেহ দেখতে সফট স্কেলের(Soft scales) মত কিন্তু এদের স্কেলের আবরণ অনুপস্থিত থাকে। সফ স্কেলদের মতই এরা হানিডীউ নামক একধরনের চটচটে আঠালো পদার্থ নিঃসৃত করে যা প্রায়্যই উদ্ভিদের দেহে একধরনের ছত্রাকঘটিত কালো দাগ বা ছাপ ফেলতে প্ররোচিত করে। ছাতুরাপোকা গুলো উষ্ণ আবহাওয়া পছন্দ করে এবং শীতিহীন এবং ঘরোয়া উদ্ভিদগুলোতে দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে। এদের অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে যায়া অযৌন উপায়ে বংশবৃদ্ধি করে থাকে।
English name Rice Mealybug
Bangla name ছাতরা পোকা
বৈজ্ঞানিক নাম Brevennia rehi
Domain: Eukaryota
Kingdom: Animalia
Phylum: Arthropoda
Class: Insecta
Order: Hemiptera
Suborder: Sternorrhyncha
Family: Pseudococcidae
Genus: Brevennia
Species: B. rehi
Binomial Name: Brevennia rehi (Lindinger)
ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, কর্ণাটক, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালা, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড।
পোষক পরিসীমা ধান, তৃণময় আগাছা
মিলিবাগ পোকার দেহগুলো স্পষ্টভাবে বিভক্ত এবং সাধাতণত মোমের আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে।প্রাপ্তবয়স্ক পোকার দেহের প্রান্তের চারপাশে সাধারণত মোমের ফিলামেন্ট থাকতে পারে। কিছু প্রজাতির ফিলামেন্টগুলো পেছনের দিকে লম্বা হয় যা বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি করে । এদের প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পোকাগুলো ডানাবিহীন হয় এবং এদের আকৃতি অনেকটা নিম্ফের মত হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পোকাগুলো খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। এদের সাধারণত ছোট দুইটু ডানা থাকে এবং লেজের ফিলামেন্ট কিছুটা লম্বা হয়।
ডিমঃ স্ত্রী মিলিবাগ অসংখ্য হলদে সাদা ডিম পাড়ে এবং পাতার বাইরের আবরণে নিম্ফগুলো জমা করে। এদের লম্বাটে বা ডিম্বাকৃতির ডিমগুলো সাধারণত স্বচ্ছ,হলদে কিংবা গোলাপি বর্ণের হয়। এরা সাধারণত ০.৩ মিলিমিটার থেকে ০.৫ মিলিমিটার লম্বা হয়। এরা মোম দিয়ে সারিবদ্ধ অবস্থায় অবস্থান করে। ডিম ফোটার সময় এরা ধূসর লালচে বর্ণের হয়ে উঠে।
নিম্ফঃ ডিম থেকে সদ্য বের হওয়া নিম্ফগুলো গাছের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার আগে ৬-১০ ঘণ্টা মমের ফিলামেন্টের মধ্যে অবস্থান করে। ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের নিম্ফগুলো সক্রিয় অবস্থায় গাছের বিভিন্ন অংশে হামাগুড়ি দেয় এবং গাছের একটি নির্দিষ্ট কান্ডে নিজেদের স্থির করে এবং একদিন পর গাড় হলুদ রঙ ধারণ করে । দ্বিতীয় দিনে এদের দেওহ মোমের আবরণে ঢেকে যায়। প্রথম ইনস্টারের নিম্ফগুলোর পরিমাপ সাধারণত ০.১-০.২ মিলিমিটার চওড়া এবং ০.৩-০.৫ মিলিমিটার লম্বা হয়। পরিপক্ক্ব অবস্থায় এরা ৩-৪ মিলিমিটার লম্বা হয়ে থাকে।
প্রাপ্তবয়স্কঃ নিম্ফ এবং প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পোকারা দেখতে একইরকম ডানাবিহীন হয়। স্ত্রী পোকার দেহ লালচে ,ডিম্বাকার এবং নরম দেহবিশিষ্ট এবং এরা পাতার আবরণের উপর কলোনি আকারে বসবাস করে। পুরুষ পোকার ক্ষেত্রে এদের দেহ ছোট,সরু,ফ্যাকাশে হলুদ। এদের একজোড়া ডানা থাকে এবং এবডোমেন এর শেষের দিকে একধরণের ফিলামেন্টের ন্যায় দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু এদের মুখোপাঙ্গ অনুপস্থিত। পুরুষ পোকাদের কলোনিতে খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। তাই এদের প্রজনন মুলত পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। পুরুষ মিলিবাগের প্রথম এবং দ্বিতীয়জোড়া পা প্রায় সমান থাকে কিন্তু এদের তৃতীয় জোড়া পা লম্বা হয়। এদের দেহ ০.৭-.০.৯ মিলিমিটার লম্বা। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীপোকা আয়তাকার এবং ডানাবিহীন। এরা লালচে সাদা এবং নরম দেহবিশিষ্ট। এদের দেহ নির্দিষ্ট একধরণের মোম কিংবা পাউডারজাতীয় আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এরা সাধাওণত ০.৫-১.৫ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এরা দেখতে অনেকটা ঘুণপোকার মত হয়ে থাকে।
স্টান্টিং একধরণের ক্ষতিকর উপসর্গ যা বিভিন্ন কীটপতঙ্গ যেমন রুটগ্রাব কিংবা ধানের মুলের এফিডের কারণে প্রকাশ পায়। যাইহোক ধানগাছে মিলিবাগের উপস্থিতি ধানপগাছের ক্ষতির ব্যাপারটি নিশ্চিত করে। ক্ষতির কারণ চিহ্নিত করতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি যেমন-স্বচ্ছ,হলুদ কিংবা গোলাপি বর্ণের ডিম,ক্রলার বা নিম্ফ,ডানাবিহীন স্ত্রী মিলিবাগ কিংবা ডানাযুক্ত হলুদাভ ফ্যাকাশে রঙের পুরুষ মিলিবাগের অবস্থান পরীক্ষা করুন। নিম্ফ এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ধরণের মিলিবাগই খাদ্য হিসেবে গাছের রস শুষে নেয়।
ধানের মিলিবাগ পোকা উচু ভূমি এবং বৃষ্টিনির্ভ্র পরিবেশে দেখে পাওয়া যায়। জমিতে সেচের সময় এদের তেমন একটা দেখতে পাওয়া যায় না। তবে বর্ষাকালে এদের প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি ঘটে। এরা ধানের চাষাবাদ থেকে শুরু করে কান্ডের বৃদ্ধি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বর্ধনশীল পর্যায়ে আক্রমণ করে থাকে। নিলিবাগ সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট অংশে যেমন- দুইটি পাশাপাশি ধানের মধ্যে, গাছের শীর্ষে কিংবা বর্ধনশীল কান্ডে , মাটির কাছাকাছি অবস্থানে কিংবা কান্ড এবং পাতার পাশাপাশি অবস্থানে কলোনি আকারে দেখতে পাওয়া যায়। কিছু মিলিবাগ প্রজাটি গাছের শিকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। শুষ্ক সময়কাল এবং ঘাসের আগাছা মেলিবাগের বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। পাশাপাশি সুনিষ্কাশিত মাটিও একই ধরনের অবস্থার জন্য দায়ী। মিলিবাগ্রত নিম্ফগুলো এদের মোল্টিং এর পূর্ব পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। এরা প্রথমে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পোকার নিচের অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে হামাগুড়ি দিয়ে উদ্ভিদের পুরো অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসের মাধ্যমেও এরা সংক্রমিত হতে পারে। পরবর্তীতে তাদের লার্ভা পুরোপুরি বিকশিত হওয়ার আগে পর্যন্ত এরা সম্পূর্ণরূপে পাতার আবরণ এবং কান্ডের উপর নির্ভরশীল থাকে। মোল্টিং এর পর একটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীপোকা গাছের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে এবং আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীপকা উদ্ভিদের কান্ডে অবস্থান করে এবং পুরুষ পোকার ডানা পরিপক্ব হওয়ার পর তারা উড়ে যায়। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের প্রথমাংশ পর্যন্ত এদের প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যে এদের দুইটি প্রজন্ম বৃদ্ধি লাভ করে ।
মিলিবাগ হল একধরণের ছোট লাল-সাদা ,নরম দেহযুক্ত, ডানাবিহীন পোকা যা ফিল্লামেন্টাস অদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে। এটি পাতার আবরণের উপর প্রায় ১২৬-১৩৯টি ডিম পাড়ে এবং পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে। ডিমের সময়কাল ১-২ দিন; নিম্ফ পর্যায়ে সময়কাল ১৭-৩৪ দিন। নিম্ফগুলো পাতার আবরনের উপর অবস্থান করে এবং গাছের রস শুষে বেঁচে থাকে।
মিলিবাগের জীবনচক্র প্রজাতিভেদে ভিন্ন হতে পারে। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীপোকা ১০-২০ দিন বয়সের মধ্যে তুলোর ন্যায় থলিতে ১০০-২০০টি বা তার বেশি ডিম পাড়ে। ডিমের থলিটি গাছের শীর্ষে,পাতা,বাকল,ফল বা ডালের সাথে যুক্ত থাকতে পারে। ব্যাতিক্রম-একধরণের লম্বা লেজযুক্ত মিলিবাগ যাদের ডিম বাচ্চা ফোটার পূর্ব পর্যন্ত স্ত্রীপোকার মধ্যে অবস্থান করে।
সদ্য ফোটা মিলিবাগ নিম্ফ(এদের Crawler ডাকা হয়) হলুদ থেকে কমলা বা গোলাপী রঙের হয়। এদের দেহে মোমের আবরণের ঘাটতি থাকে এবং ভাসমান অবস্থায় থাকে। কিন্তু এরা খাদ্য গ্রহণের জন্য স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকেই মোমের আবরণ নিঃসৃত হতে থাকে। যদিও বয়স্ক নিম্ফ গুলোর পা থাকে এবং তারা একস্থান থেকে অন্যত্র চলাচল করতে পারে,কিন্তু এরা সাধারণত খুব দ্রুত কিংবা দূরে চলাচল করে না। নিম্ফের মোলতগুলো প্রাপ্তব্যস্ক হওয়ার আগে কতগুলো ইনস্টারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে।
প্রজাটি এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে মিলিবাগ গুলো বছরে ২-৬ বার বংশবিস্তার করে থাকে। যেখানে জলবায়ু উষ্ণতর বা গাছপালা বাড়ির অভ্যন্তরে বেড়ে উঠেছে,সেখানে সারাবছর এদের উপদ্রব দেখা যেতে পারে। আঙ্গুরের মত পর্ণমোচী উদ্ভিদে(বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পাতা ঝরে যায়), মিলিবাগগুলো্র নিম্ফ বা প্রথম পর্যায় শীতকালে গাছের বাকলের নিচে ডিমের থলির মধ্যে অবশান করে কাটিয়ে দিতে পারে।
মিলিবাগগুলো শণাক্তকরণে অনেকসময় অন্যান্য কীটের সাথে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে যারা মোমের আবরণ,হানিডিউ এবং কালো ছাপযুক্ত দাগ তৈরি করতে পারে। যেমন, তুলোর ন্যায় কুশন স্কেল, কিছু এফিড,সফট স্কেল এবং কিছু প্রজাতির সাদা মাছি। তাই মোমের আবরণের নিচে মিলিবাগ শণাক্তকরণে সাবধানতা আবশ্যক।
মিলিবাগগুলো উদ্ভিদের ফ্লোয়েম থেকে রস শুষে নেয়,উদ্ভিদের জীবনীশক্তি হ্রাস করে এবং একধরণের চটচটে আঠালো হানিডিউ এবং মোম নিঃসৃত করে যা উদ্ভিদ এবং ফসলের গুনমান হ্রাস করে বিশেষ করে যখন হানিডিউ এর উপর একধরণের ছত্রাকঘটিত কালো দাগ পড়ে। মিলিবাগ এবং এদের নিঃসৃত মোমের আবরণ দেখতে কুৎসিত কিংবা অচিত্তাকর্ষক হতে পারে। অধিকসংখ্যক কীট পাতা এবং ডালপালায় আক্রমণ করলে গাছের বৃদ্ধি ধীর হতে থাকে এবং পাতা ঝরে পড়ে। তবে স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ উল্লেখযোগ্য ক্ষতি ছাড়াই অল্পসংখ্যক মিলিবাগের সংক্রমণ সহ্য করতে পারে। গ্রাউন্ড মিলিবাগ, যা প্রকৃতি কিংবা বাগানে তেমন দেখা যায় না কিন্তু এরা গাছের শিকড় খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং গাছের বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এদের সাধারণত মাটি খুড়ে গাছের শিকড়সহ উন্মুক্ত না করলে শনাক্ত করা যায় না।
স্বচ্ছ,হলুদ কিংবা গোলাপি বর্ণের ডিমের উপস্থিতি।
ক্রলার বা নিম্ফ,ডানাবিহীনবেগুনী রঙের স্ত্রী পোকা এবং ডানাযুক্ত ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের পুরুষ পোকার রস নিষ্কাশন।
ডিম,নিম্ফ কিংবা প্রাপ্তবয়স্কদের উপর মোমের আবরণ যা এদের পাতা বা কান্ডের আবরণের উপর লেগে থাকতে সাহায্য করে।
বৃদ্ধি এবং বিকাশের পর্যায় একইরকম না হওয়া।
প্রচুরসংখ্যক পোকা উদ্ভিদের পাতার আবরণের উপর আক্রমণ করে এবং রস শুষে নেয়,যা উদ্ভিদের উপর বৃত্তাকার ছাপ ফেলে।
উদ্ভিদ হলুদাভ ও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এদের বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
পাতার আবরণের উপর সাদা মোমের আস্তরণ পড়্বে।এধরণের উপদ্রবকে ‘সুরাই’ বা ‘চাকধরা’ রোগ হিসেবে ডাকা হয়।
গাছপালা শুকিয়ে যায়।
ধানের মিলিবাগ পোকা প্রতিবছর বাংলাদেশ,ভারত এবং থাইল্যান্ডে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে থাকে। উদ্ভিদে এই পোকার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে গাছপালা শুকিয়ে মারা যেতে পারে।(>১০০ মিলিবাগ/হিল)
কীটনাশক দিয়ে মিলিবাগের সংক্রমণ রোধ করা খুব কঠিন। সৌভাগ্যবশত,বেশিরভাগ মিলিবাগ প্রজাতিরই প্রাকৃতিক শত্রু রয়েছে যারা প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে যেমন- আউটডোর বাগান কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের সংক্রমণ ক্ষতিকর মাত্রার নিচে থাকে। যেসব উদ্ভিদ এই পোকার সংক্রমন প্রতিরোধে সক্ষম সেধরণের প্রজাতি শনাক্ত করা মিলিবাগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম পন্থা হতে পারে। গাছপালা ক্রয় কিংবা চাষ করার পূর্বে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেওয়া জরুরি। এছাড়া মিলিবাগের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বায়োলজিকাল উপায়ে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করা উচিৎ।
মিলিবাগগুলো প্রায়শই ল্যান্ডস্কেপে (এবং বিশেষ করে ইনডোর প্লান্ট এর ক্ষেত্রে) নতুন গাছপালা বা সরঞ্জাম বা পাত্রে বংশবিস্তার করে। যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীপোকা উড়তে পারে না এবং মিলিবাগগুলো খুব দ্রুত ক্রল করতে পারে না, তাই তারা বাগানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে না। কোনো নতুন গাছ লাগানোর আগে মিলিবাগের আক্রমণের ব্যপারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিদর্শন করুন। উপস্থিত সমস্ত মিলিবাগ অপসারণ করতে না পারেন, তাহলে গাছটিকে উপড়ে ফেলুন অথবা ধ্বংস করে ফেলুন।
আপনার ল্যান্ডস্কেপে কিংবা ইনডোরে মিলিবাগ-প্রবণ উদ্ভিদের প্রজাতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। যদি এদের উপদ্রব খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে শারীরিকভাবে পোকামাকড়গুলিকে হাত দিয়ে তুলে ফেলুন বা ছাঁটাই করে সরিয়ে ফেলুন। বয়স্ক গাছগুলিকে ফেলে দিন। কারণ এরা নতুন গাছের সংক্রমণের উৎস হতে পারে। মিলিবাগ এবং তাদের ডিমের থলির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাত্র,টব এবং অন্যান্য উপকরণগুলি পরীক্ষা করুন এবং যেকোন সংক্রমিত পাত্র নিষ্পত্তি করুন।
যদি মিলিবাগগুলির উপস্থিতি কিছুটা উন্মোচিত হয় তবে উচ্চ চাপ বা জোরপূর্বক পানিত স্প্রে দিয়ে শক্ত উদ্ভিদে এদের জনসংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে। একই প্রক্রিয়া কয়েকদিনের ব্যবধানে নিয়মিত করে যেতে হবে।
মিলিবাগ সহ গাছে নাইট্রোজেন সারের অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগ এড়িয়ে চলতে হব্র। নিয়মিত সেচের সাথে নাইট্রোজেনের অতিরিক্ত প্রয়োগ কোমল নতুন উদ্ভিদের বৃদ্ধির পাশাপাশি মিলিবাগ ডিম উৎপাদনকেও উদ্দীপিত করতে পারে।
আপনার ল্যান্ডস্কেপ বা ইন্টেরিয়রস্কেপে যদি মিলিবাগের গুরুতর সংক্রমণের ইতিহাস থাকে, তবে মিলিবাগের ঘনত্ব এবং আশ্রয়ের সম্ভাবনা কমাতে কমপক্ষে এক বা দুই বছরের জন্য মেলিবাগ প্রবণ নয় এমন উদ্ভিদের প্রজাতি ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করুন।
গ্রাউন্ড মিলিবাগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন যেগুলো মাটির উপরিভাগে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। গ্রাউন্ড মিলিবাগের আক্রমন রোধ করুন এবং পোকামাকড় পরিষ্কার গাছে যাওয়ার আগে দ্রুত সংক্রমিত গাছগুলিকে নিষ্পত্তি করুন।
প্রাকৃতিক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াঃ
মিলিবাগের চাপ কমাতে উদ্ভিদের দ্রুত ট্রান্সপ্লান্ট করা।
ঘাসযুক্ত আগাছা পরিষ্কার করুন যা এই পোকার বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
উপদ্রব কমাতে কাঁচা নারকেল এর ছোবড়া, কাঁচা আখের আবর্জনা এবং সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পিঁপড়াদের কলোনি ধ্বংস করুন কারণ পিঁপড়া এবং মিলিবাগ সাধারণত একসাথে পাওয়া যায়।
সম্পুর্ণ বর্ধনশীল সময়জুড়ে 5 সেন্টিমিটার পর্যন্ত সেচের ব্যবস্থা করুন।
ক্রমবর্ধমান সময়কালে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ফসল পর্যবেক্ষণ করুন।
উচু জমিতে ধান চাষের ক্ষেত্রে এবং বৃষ্টিনির্ভর চাষে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
মিলিবাগের উপস্থিতি পাওয়া মাত্রই সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করুন।
ক্ষতিগ্রস্ত গাছপালা অপসারণ এবং ধ্বংস করুন।
অনেক প্রাকৃতিক শত্রু ল্যান্ডস্কেপে ফলের গাছ এবং কাঠের শোভাময় গাছগুলিতে মিলিবাগগুলোকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং মেরে ফেলে। মিলিবাগের আক্রমণ সহনীয় মাত্রায় রাখার জন্য এজাতীয় উপকারী পতঙ্গগুলোর উপর নির্ভর করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক শত্রুর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েক প্রজাতির প্যারাসাইটিক ওয়াস্প(Wasps) যারা । সাধারণ পরজীবী (বা "প্যারাসাইটয়েড") প্রজাতির মধ্যে Coccophagus, Leptomastix, Allotropa, Pseudaphycus, and Acerophagus অন্যতম। মিলিবাগ কলোনির মধ্যে বা মমিফাইড মিলিবাগের গর্তের মধ্যে প্যারাসাইটের পিউপার সন্ধান করুন। Leptomastix dactylopii কে বাণিজ্যিকভাবে গ্রীনহাউস, সাইট্রাস গ্রোভ এবং ইন্টেরিয়রস্কেপে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হয়, কিন্তু এটি শুধুমাত্র সাইট্রাস মিলিবাগকে ধ্বংস করতে সক্ষম। অন্যান্য কিছু জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এজেন্ট এর মধ্যে ছোট এনসার্টিড ওয়াস্প, মাকড়সা, ক্লোরোফিড ফ্লাই, ড্রসোফিলিড এবং লেডি বিটল অন্যতম।
মিলিবাগ ধ্বংসকারী পোকাগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য কেনা যেতে পারে এবং এটি প্রায়শই ঠান্ডা পরিবেশে সংক্রমণকারী মিলিবাগগুলোকে ধ্বংস করার পরে গ্রিনহাউস এবং ইন্টেরিয়রস্কেপে বা সাইট্রাস উদ্ভিদে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পোকাগুলোর মাথা লালচে-বাদামী ও পেছনের প্রান্ত এবং মাঝখানে কালো রঙের হয়; পুরানো মিলিবাগ ধ্বংসকারী লার্ভা সাদা মোম দিয়ে আবৃত থাকে, যা তাদের দেখতে কিছুটা বড় মিলিবাগের মত মনে হয়। বায়োলজিকাল কন্ট্রোলগুলো ব্যবহার করার সময় মিলিবাগগুলোর ডিমের সংখ্যা এবং তাদের বর্ধনশীল পর্যায়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ লেডি বিটলদের তাদের নিজস্ব প্রজননকে উদ্দীপিত করার জন্য খাবার হিসাবে মিলিবাগ ডিমের প্রয়োজন হয়। যখন মিলিবাগের সংখ্যা কম থাকে বা যখন তারা বংশবিস্তার করে না তখন লেডিবিটলগুলোকে ছেড়ে দিলে বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিয়মিত মিলিবাগের সংক্রমণ,গ্রীনহাউস বা ইন্টেরিয়রস্কেপের অপারেটররা তাদের নিজস্ব মিলিবাগ ধ্বংসকারী বায়োলজিকাল কন্ট্রোল কলোনি স্থাপন করতে পারে। একটি চওড়া বয়ামে মিলিবাগ সংক্রমিত আলু বা অন্যান্য হোস্টে জন্মানো উদ্ভিদে লেডি বিটলের চাষাবাদ বা পালন করা যেতে পারে। বয়ামের ভেতরে পেট্রোলিয়াম বা অন্যান্য আঠালো পদার্থের একটি রিং স্থাপন করে দিলে ডানাবিহীন স্ত্রী মিলিবাগগুলো হামাগুড়ি দিয়ে বেড়িয়ে যেতে বাধা পাবে কিন্তু লেডি বিটলগুলো গ্রিনহাউসে উড়ে যেতে পারবে।
এলাকার যেকোন পোকামাকড়ের জন্য ব্রড-স্পেকট্রাম কীটনাশক ব্যবহার এড়িয়ে প্রাকৃতিকভাবে বায়োলজিকাল কন্ট্রোল এজেন্ট সংরক্ষনের ব্যপারে নজর দিতে হবে। এছাড়াও পিঁপড়াদের মিলিবাগ-আক্রান্ত এলাকা এবং গাছপালা থেকে দূরে রাখতে হবে কারণ পিঁপড়া তাদের প্রাকৃতিক শত্রুদের থেকে মিলিবাগদের রক্ষা করে।
অ-রাসায়নিক পদ্ধতিগুলো সাধারণত বাগান এবং ল্যান্ডস্কেপের আউটডোর উদ্ভিদের জন্য যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। বাড়িতে এবং বাগানের কীটনাশক মিলিবাগের জন্য খুব কার্যকর নয়, বিশেষ করে বড় গাছে। মিলিবাগের মোমের আবরণ বেশিরভাগ ব্যবহার্য কীটনাশকগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং মোমের আবরণে লুকায়িত অবস্থায় কীটনাশকগুলোকে তাদের কাছে পৌঁছানো কঠিন করে তোলে।
একর প্রতি 400 মিলি হারে 1% অ্যাজাডিরাক্টিন স্প্রে করা।
ফিস অয়েল রেজিন সোপ স্প্রে করা (প্রতি লিটারে ২৫ গ্রাম)।
300 মিলি/একর হারে বুপ্রোফেজিন 25% SC স্প্রে করা (যেমন, বাণিজ্যিক নাম: Applaud, Flotis, Blunt) [WHO Class III (Slightly hazardous)]।
50 গ্রাম/একর হারে থায়ামেথক্সাম 25% WG স্প্রে করা (যেমন, বানিজ্যিক নাম: টাফগর, রোগর, রোগরিন) [WHO Class II (Moderately hazardous)]।
ডাইমিথোয়েট (30 EC) ৪০০ মিলি/একর স্প্রে করা।
ঘরের গাছপালা, গ্রিনহাউস এবং ইন্টেরিয়রস্কেপের ক্ষেত্রে যেখানে শারীরিকভাবে মিলিবাগ অপসারণ করা সম্ভব নয় এবং যেখানে বায়োলজিকাল কন্ট্রোলও সম্ভব নাও হতে পারে সেখানে মিলিবাগ দমনে স্পট ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে স্পট ট্রিটমেন্ট:
গৃহপালিত উদ্ভিদে স্বল্প পরিসরে আক্রমনের ক্ষেত্রে পানিতে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের 70% বা তার কম দ্রবণ ব্যবহার করে একটি তুলো দিয়ে সরাসরি মিলিবাগগুলোকে মেরে ফেলা বা অপসারণ করা যেয়ে পারে। দ্রবণটি 1 থেকে 2 দিন আগে গাছের একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে দেখুন এটির কারণে লিফবার্ণ হয় কিনা(ফাইটোটক্সিসিটি)। কিছু ক্ষেত্রে, একটি অনেক বেশি পাতলা দ্রবণ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। যেখানে সংক্রমণ ব্যাপক, সেখানে আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের 10-25% দ্রবণ একটি স্প্রে বোতল দিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সংক্রমণ চলে না যাওয়া পর্যন্ত আপনাকে প্রতি সপ্তাহে এই পদ্ধতিটি পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
কীটনাশক
মিলিবাগ দমনে কীটনাশক সাবান, হর্টিকালচারাল অয়েল, বা নিম তেলের কীটনাশক সরাসরি মেলিবাগগুলিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিশেষত কম বয়সী নিম্ফগুলির বিরুদ্ধে, যাদের মোমের আবরণ সুগঠিত হয় না। চিকিৎসার আগে এই উপকরণগুলির ফাইটোটক্সিসিটি পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যক।
পদ্ধতিগতভাবে ডাইনোটেফুরান (Dinotefuran) ধারণকারী কীটনাশকগুলো কিছু ল্যান্ডস্কেপ উদ্ভিদে মিলিবাগের সংখ্যা কমাতে পারে এবং ইমিডাক্লোপ্রিড(Imidacloprid) ধারণকারী কীটনাশকগুলো উদ্ভিদের স্পাইক বা গ্রানিউলে মিলিবাগ ক্রলারের সংখ্যা কমাতে পারে। এই নিওনিকোটিনয়েড পণ্যগুলি অনেক পরিস্থিতিতে অন্যান্য পোকামাকড়ের তুলনায় মিলিবাগের বিরুদ্ধে কম নির্ভরযোগ্য। প্রাকৃতিক শত্রু এবং পরাগরেণুর উপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবের কথা চিন্তা করে ফুল গাছগুলিতে সম্ভব হলে এদের ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
পাইরেথ্রয়েড(Pyrethroid) সহ অন্যান্য কীটনাশকগুলিকেও কিছু পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয় তবে তারা সাবান এবং তেলের চেয়ে বেশি কার্যকর নাও হতে পারে এবং প্রাকৃতিক শত্রুদের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, উক্ত কীটনাশকগুলির কোনোটির দ্বারাই মিলিবাগের আক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এবং প্রয়োজন অনুসারে আপনাকে বারবার ফসলের পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা করতে হবে। যখন সংক্রমণ গুরুতর হয়ে যায়, বারবার কীটনাশক প্রয়োগ না করে গাছগুলোকে ছাটাই করে ফেলতে হবে। বাইরের গাছপালা, চাষাবাদ প্রক্রিয়া এবং জৈবিক নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ পরিস্থিতিতেই মিলিবাগ দমনের জন্য পর্যাপ্ত হওয়া উচিত।
কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
কেমিক্যালগুলো ব্যবস্থাপনার সময় সর্বদা প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করুন, পণ্যের লেবেলে প্রদানকৃত নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।
তথ্য পাওয়া যায়নি।
তথ্য পাওয়া যায়নি।
1. https://ipm.ucanr.edu/PMG/PESTNOTES/pn74174.html
2. https://en.wikipedia.org/wiki/Brevennia_rehi
3. https://agritech.tnau.ac.in/crop_protection/rice/crop_prot_crop_insectpest%20_cereals_paddy_m14.html
4. http://www.eagri.org/eagri50/ENTO331/lecture01/006.html
5. https://plantwiseplusknowledgebank.org/doi/10.1079/pwkb.20207800533
6. https://agrinfobank.com.pk/rice-mealy-bug/
WARNING ON THE USE OF PESTICIDES